গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গিরা একটি নিরাপদ মেসেজিংয়ের অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) ব্যবহার করেছিল। অ্যাপটির নাম থ্রিমা। জিম্মিদের নৃশংসভাবে হত্যা করার পর সেই ছবি আপলোড করে তা পাঠাতে ওই অ্যাপটি ব্যবহার করা বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। তবে তারা এ ব্যাপারে কোনো সূত্র প্রকাশ করেনি।
থ্রিমাকে নিরাপদ মেসেজিংয়ের অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে মনে করা হয়। এটি ব্যবহার করে বার্তা পাঠানোর পর তা সার্ভার থেকে মুছে ফেলতে পারে। পরিচয় গোপন রেখে এটি করা যায় বলে ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা যায় না। এ কারণে ওই রাতে কী ঘটেছিল, সে তথ্য পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠিন করে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ আক্রমণকারী ও জঙ্গি সংগঠন জেএমবির মধ্যকার সম্পর্ক বের করার চেষ্টা করছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে র‍্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজির আহমেদ বলেন, ‘তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে যেটুকু জানা গেছে, তা থেকে বলতে পারি, জেএমবির সঙ্গে এদের যোগসূত্র আছে।’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের সাহায্যকারী হিসেবে আরও ছয়জনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার নাম প্রকাশ না করা দুজন সন্দেহভাজনকে জেরা করা হয়। এদের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি কর্তৃপক্ষ। একজন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন।
থ্রিমা ও আইএস: তথ্য–নিরাপত্তাবিষয়ক এসসি ম্যাগাজিন এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে থ্রিমা ও আইএসের সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসের হ্যাকিং ইউনিট সাইবার ক্যালিফেট তাদের যোগাযোগের জন্য টেলিগ্রাম ছেড়ে থ্রিমাতে চলে এসেছে। মিডল ইস্ট মিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এমইআরই) নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন স্টালিনিস্কিনর বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার ক্যালিফেট তাঁদের সমর্থনকারীদের থ্রিমা ব্যবহারের কথা বলে।
এরপর তাদের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে সাইবার ক্যালিফেট নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে, যাতে তাদের অনুসারীদের বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়া কোনো লিংকে ক্লিক করতে, টুইটারে সরাসরি বার্তা পাঠাতে এমনকি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারে নিষেধ করা হয়। এর পরিবর্তে ভারচুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক-ভিপিএন বা টর ব্যবহারে পরামর্শ দেওয়া হয়।
থ্রিমা কী: বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, থ্রিমা জার্মানির একটি জনপ্রিয় অ্যাপ। আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ফোনে থ্রিমা ব্যবহার করে বার্তা আদান-প্রদান ছাড়াও মাল্টিমিডিয়া, লোকেশন, ভয়েস মেসেজ ও ফাইল পাঠানো যায়। সুইজারল্যান্ডের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্রিমা জিএমবিএইচ ২০১২ সালে এটি তৈরি করে। এর সার্ভার সুইজারল্যান্ডে। ২০১৫ সালের জুন মাসের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ লাখ ব্যবহারকারী থ্রিমা ব্যবহার করে, যার অধিকাংশ জার্মান। থ্রিমা তৈরির পেছনে কাজ করছেন ম্যানুয়েল ক্যাসপার নামের এক উদ্যোক্তা। আগে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ক্যাসপার সিস্টেমস। সফটওয়্যার নির্মাতা মার্টিন ব্ল্যাটার ও সিলভান অ্যাংগলারকে পরবর্তী সময়ে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরির জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ উন্মুক্ত করা হয়। ওই বছর স্নোডেন মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করার পর থ্রিমার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুক যখন হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নেয়, তারপরই এক দিনেই থ্রিমার ব্যবহারকারী দুই লাখ বেড়ে যায়। এর মধ্যে ৮০ ভাগ জার্মানির। ২০১৪ সালে এর নামকরণ করা হয় থ্রিমা জিএমবিএইচ।
 
Top