বগুড়ার শেরপুরে শেষ হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপুশি মেলা, যা স্থানীয়দের কাছে জামাই মেলা হিসেবেই পরিচিত।
শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার মাঝামাঝি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসা এ মেলা উপলক্ষে এই দুই উপজেলার সব জামাইরা শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত পেয়ে থাকেন। এ কারণেই স্থানীয়দের কাছে এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত।
মঙ্গলবার শেষ হওয়া এই মেলায় এবারও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী মেয়ে-জামাইদের সঙ্গে নিয়ে এসে ছাতা, মিষ্টি ও লুঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনে দিতে দেখা গেছে স্থানীয় মুরুব্বিদের।
বহু বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব ঠিক কবে প্রথম শুরু হয়েছিল সে ব্যাপারে কেউ সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে না পারলেও অনেকে বলছেন, মেলাটির বয়স প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর।
প্রতিবছর গ্রীষ্মে এই মেলা হয় জানিয়ে শেরপুরের বাগড়া এলাকার ৭০ বছরের বৃদ্ধ মো. কুদ্দুস বলেন, “ছোট বেলা থেকেই জামাই মেলা হিসেবে আমরা একে দেখে আসছি। প্রবীণ লোকদের কাছে শুনেছি, প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর থেকে মেলাটি হয়ে আসছে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় গ্রামীণ হাঁড়ি পাতিলসহ সবধরনের পশরা বিক্রি হচ্ছে। বড় বড় মাছ আর বড় বড় মিষ্টি কিনছে ক্রেতারা। আড়াই কেজি ওজনের মিষ্টিও বিক্রি হচ্ছে।
জামাই ও নাতি-নাতনিদের জন্য মেলা থেকে কেনাকাটা বাড়ি ফেরার পথে ‘জামাই মেলায়’ শেষদিন মঙ্গলবারের চিত্র মেলায় আসা শেরপুর দাড়কিপাড়ার আরজ আলী বলেন, “এই মেলাটি আমাদের কাছে অনেক উৎসবের। জামাইকে কাপড়-চোপড় কিনে দিলাম। তিনদিন আগে জামাই-মেয়ে নাতি-নাতনি নিয়ে এসেছিলাম। খুব ভালোই কাটলো কয়েকটা দিন।”
স্থানীয়রা জানান, গরীব-ধনী নির্বিশেষে শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার সবাই জামাইকে কেল্লাপুশি মেলায় নিমন্ত্রণ করবেই, এটা এই এলাকার একটা উৎসব।
নন্দীগ্রামের ভাটগ্রামের আব্দুল হাকিমের জামাই সরাফত বলেন, “মেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও এসেছি। কিন্তু নিজে কেনাকাটা করার কোনো সুযোগ নেই, শ্বশুর কেনাকাটা করার জন্য সাথে নিয়ে এসেছে।”
স্থানীয় এই বড় উৎসবটি যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য এলাকায় থেকে প্রশাসনকে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ হাবিবর রহমান।
তিনি বলেন, “বাঙালির এসব উৎসব ধরে রাখতে হবে প্রাণের তাগিদে।”