গ্যালাক্সি নোট ৭ স্মার্টফোন বদলে অন্য কোনো মডেলের স্যামসাং স্মার্টফোন নিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এমন গ্রাহকদের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির এই ইলেকট্রনিক জায়ান্ট।
নিরাপত্তা ত্রুটির কারণে নোট ৭ হ্যান্ডসেটের জীবনের ইতি টেনে দিলেও, এর কারণে হওয়া মর্যাদাহানি কমাতেই হয়তো এমন পদক্ষেপ নিল প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি যখন চলতি বছর বাজারে নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসটি দুই মাসের মাথায় চিরতরে সরিয়ে নিল, তখন অ্যাপল আর এলজি'র মতো প্রতিদ্বন্দ্বী বাজারে থেকে স্যামসাংয়ের শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায়। কিন্তু স্যামসাংকে নজর দিতে হচ্ছে ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের দিকেই, এমনটাই বলা হয়েছে রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানগত রেটিং তৈরিকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফিচ রেটিংস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, "নোকিয়া আর ব্ল্যাকবেরি'র পতনের মতো ব্যবসায় অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, সফল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কত জলদি হ্যান্ডসেট ব্যবসায় বাজারের শেয়ার হারাতে পারে।"
সামাজিক মাধ্যমে নানা বিদ্রুপ আর সমালোচনার তীরে নোট ৭ ফেরত দেওয়ার সময় স্যামসাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের অগ্নিনিরোধী বাক্স আর সুরক্ষা গ্লাভস পাঠানো শুরু করেছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স। নিজ দেশের বাজারে প্রতিষ্ঠানটি অর্থ ফেরত বা অন্য পণ্যের সঙ্গে বিনিময় করে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া শুরু করে। যারা তাদের নোট ৭ ফেরত দিয়ে অর্থ নিয়েছেন, তাদের ৮৮০ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার ওন (২৬.৯১ ডলার)-এর কুপন। যারা এই হ্যান্ডসেট দিয়ে অন্য আরেকটি উন্নত মানের স্যামসাং স্মার্টফোন নিয়েছেন, তাদেরকে মোবাইলে বাড়তি ৭০ হাজার ওন ক্রেডিট দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথমবার অভিযোগ উঠার পর বাজার থেকে ২৫ লাখ হ্যান্ডসেট তুলে নিয়ে ব্যাটারি বদল করে নতুনভাবে ছাড়ার খরচ তো আছেই।
এই ক্ষতিপূরণ গ্রাহকদের 'বড় অসন্তোষ' কমাবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে স্যামসাং।
চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে করা পূর্বাভাসেও পড়েছে নোট ৭ প্রভাব। বুধবার প্রতিষ্ঠানটি তাদের পূর্বাভাস দেওয়া লাভের পরিমাণ ২৩০ কোটি ডলার কমিয়ে এনেছে। তবে অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, স্যামসাংয়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি মর্যাদাহানি। আর এক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণটা আর্থিক হিসাবে বলাও সম্ভব নয়।
ফিচ বলেছে, "ব্র্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাব্য ক্ষতি, এর ক্রেডিট প্রোফাইলের জন্য সরাসরি হওয়া আর্থিক ক্ষতির তুলনায় অনেক বেশি।"
এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া'র কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নোট ৭ ব্যর্থতা আর্থিক প্রবৃদ্ধিকে দমিয়ে দেবে, যদিও এর প্রভাব কতটুকু তা বুঝতে আরও সময় দরকার।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর স্যামসাংয়ের শেয়ার মূল্য এক শতাংশ বেড়েছে। শেষ তিনদিন টানা পড়তে থাকার পর এই প্রথম আবার ঘুরল প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মূল্য।