ভারতের বিশাখাপত্তমের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছে উত্তরে, বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। শনিবারের মধ্যে সেটি গভীর নিম্নচাপের রূপ পেতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন ভারতের আবহাওয়াবিদরা।
নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে শুক্রবার সকাল থেকে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রোববার পর্যন্ত এই ধারা চলতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৩৫ কিলোমিটার পশ্চিম- দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
সে সময় নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, নিম্নচাপটি ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার গতিতে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আরও সরে এসে সামান্য বাঁক ঘুরে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। শনিবারের মধ্য আর ঘনীভূত হয়ে নিতে পারে গভীর নিম্নচাপের রূপ।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে অধিদপ্তর।
পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শনিবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল এ অঞ্চলে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের একটি তালিকা করে রেখেছে। কোনো নিম্নচাপ সাইক্লোনের রূপ নিলে ওই তালিকা থেকে নির্ধারিত নামটি বরাদ্দ হয়।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে তার নাম হবে ‘নাদা’। এ নামটি ওমানের দেওয়া।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে মিয়ানমারের প্রস্তাব অনুসারে নাম নাম দেওয়া হয় কায়ান্ট, যার অর্থ কুমির। কায়ান্ট দুর্বল হয়ে আবার সাগরেই নিম্নচাপে পরিণত হয়; সেটি উপকূল অতিক্রম করেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে অন্তত দুটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।