স্মার্টফোনের বিক্রি আগের তুলনায় কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যও। প্রশ্ন উঠছে, স্মার্টফোনের যুগ কি তবে শেষ? অবশ্য বিশ্লেষকেরা এখনই তা মানতে নারাজ।
সম্প্রতি বাজারে নতুন আইফোনের ঘোষণা দিল অ্যাপল। ৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে আইফোন ৭ ও ৭ প্লাসের ঘোষণা দিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী টিম কুক। কিন্তু এবারের আয়োজন বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনপ্রেমীদের মন জয় করতে পারেনি। আইফোনেও নেই তেমন উদ্ভাবনী ফিচার। নতুন স্মার্টফোনে যদিও উন্নত ক্যামেরা, দ্রুতগতির চিপ, উজ্জ্বল ডিসপ্লে এসেছে, তবু এটাকে আগের সংস্করণের চেয়ে কিছুটা উন্নত বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আইফোনের মধ্যে নতুনত্ব হিসেবে এসেছে প্রচলিত হেডফোন জ্যাকের বিদায়ের ঘটনা। তারবিহীন প্রযুক্তিতে চলে গেল অ্যাপল।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, আশানুরূপ জাঁকজমক না থাকলেও নতুন আইফোন স্মার্টফোনের বাজার কিছুটা চাঙা করতে পারবে। প্রায় টানা ১০ বছর ধরে স্মার্টফোনের বাজার বাড়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে এসেছে স্মার্টফোনের বাজার পড়তে শুরু করেছে। ২০০৭ সালে আইফোন বাজারে আসার পর থেকে স্মার্টফোনের বাজার শুধু বেড়েছে। কিন্তু গত কয়েক প্রান্তিকে স্মার্টফোনের বাজার যেমন কমেছে, তেমনি উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যও কমেছে। স্মার্টফোনের দামও কমেছে। এসব দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, স্মার্টফোনের যুগ শেষ।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন বিক্রি বৃদ্ধির হার এখন খুব ধীর। এখনকার স্মার্টফোন মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারায় তারা ঘন ঘন ফোন পরিবর্তন করছে না। এ ছাড়া উন্নত দেশগুলোতে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার ৯০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। তবে ফোন বিক্রির সর্বমোট হিসাব এখনো আশাব্যঞ্জক। এ বছর ১৪৬ কোটি ​ইউনিট স্মার্টফোন বাজারে আসতে পারে। ২০২০ সালে ১৭৬ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারে আসবে।
এই সংখ্যা দেখেই বলা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক যন্ত্র স্মার্টফোন। তবে এখন স্মার্টফোনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আসছে পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য। এর মধ্যে রয়েছে স্মার্টওয়াচ, ফিটনেস ব্র্যান্ড প্রভৃতি। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের বাজার দাঁড়াবে ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে। কিন্তু এটি স্মার্টফোনের তুলনায় নগণ্যই বলতে হবে। এ বছর স্মার্টফোনের বাজার ৩৪ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রাহকদের চাহিদার তালিকায় যদি স্মার্টফোন শীর্ষ পণ্য হিসেবে থাকে, তবে প্রযুক্তি বাজারের বিবর্তন কীভাবে হবে? সিসিএস ইনসাইটের বিশ্লেষক বেন উড বলেন, হার্ডওয়্যারের উদ্ভাবন আরও বাড়বে। নতুন ফোনে উন্নত স্ক্রিন, দ্রুতগতির প্রসেসরসহ নতুন উপাদানের ব্যবহার দেখা যাবে। এ ছাড়া আরেকটি ক্ষেত্রে উন্নতি হবে। তা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে। ইতিমধ্যে অ্যাপলের সিরি, গুগল নাউ, মাইক্রোসফটের করটানা এ ক্ষেত্রে চলে এসেছে। স্মার্টফোন আরও স্মার্ট হবে।
বাজার গবেষকেরা বলছেন, বাজার দখলের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল, চীনের হুয়াওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং এগিয়ে থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলো হারিয়ে যেতে পারে বা বাজারে ছোট অংশ দখল করে রাখতে পারে। শীর্ষস্থান ধরে রাখতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চমক নিয়ে হাজির হতে পারে। আগামী বছরই আইফোনের ১০ বছর পূর্ণ হবে। ওই সময় অ্যাপল নিশ্চয়ই কোনো না কোনো চমক দেবে। তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট।
 
Top