তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এবার চীন ১৫৪
মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহযোগিতা দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের পরে এটাই সবচেয়ে বড়
অর্থ সহযোগিতা পাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। চীনের এই অর্থ দিয়ে ‘টিয়ার-৪
ডেটা সেন্টার’ স্থাপনের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সরকারের
‘ইনফো সরকার-৩’, ‘এস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি’ প্রকল্পের লোন
এগ্রিমেন্টও অনুমোদন দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে চীন কর্তৃপক্ষ
ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করে দেয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চায়না এক্সিম ব্যাংক এ
বছরেরই সব প্রকল্পে ঋণ সহযোগিতা দেবে। ঋণ সহযোগিতার বাইরে চীন আগামী ২০২১
সালের মধ্যে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ৫ বিলিয়ন
মার্কিন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের তথ্য
প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নে চীন সরকার নানা প্রকল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে।
সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, চীনের ঋণ
সহযোগিতা ও চীনের বিনিয়োগ এলে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।
আমরা যে সব অবকাঠামো তৈরি করেছি তার সঙ্গে চীনের সহযোগিতা পেলে দেশ উন্নত
দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হবে। ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে ১৮
হাজার ১৩২টি সরকারী সংস্থা অবিভক্ত নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রযুক্তি খাতে দক্ষ পেশাজীবী তৈরির জন্য ৩৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ
দেয়ার কাজ চলছে। এই প্রশিক্ষণের আওতায় এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরি করা হয়েছে। তারা বিশ্বমানের সনদ পাচ্ছেন। এই সনদ
বিশ্বের সব দেশেই সমান গুরুত্ব বহন করবে। এ বছরের শেষ নাগাদ দেশের সাড়ে ৪
হাজার ইউনিয়ন পরিষদ ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের আওতায় চলে আসবে। ২০১৭ সালের
মধ্যে দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপন করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি
(আইসিটি) খাতে চীন সরকারের ঋণ সহযোগিতাকে ইতিবাচক হিসেবে ধরা হচ্ছে। বাংলা
গভঃ নেট ও ইনফো সরকার প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রায় সব উপজেলা বর্তমানে
ফাইবার অপটিক কেবলে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে দেশের ১৮ হাজার ১৩২টি সরকারী সংস্থা
অচিরেই অবিভক্ত নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে।
সচিবালয় থেকে গ্রাম পর্যন্ত উচ্চগতির
নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা হবে। বিভিন্ন জায়গায় দেয়া হয়েছে
ওয়াইফাই সুবিধা। ৩৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী হিসেবে গড়ে
তোলার কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে একাধিক ব্যাচের লোকজন ভাল চাকরি পেয়েছে। ২০
হাজার জনকে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার জনকে টপ আইটি প্রশিক্ষণ এবং সাড়ে
চার হাজার জনকে ফাস্ট ট্র্যাক ফিউচার লিডার হিসেবে গড়ে তোলা হবে। হাইটেক
পার্কের অন্তর্ভুক্ত স্টিল এনহান্সমেন্ট কর্মসূচীর আওতায় ২ হাজার ৪৫০ জনকে
প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এক হাজার জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, বাকিদের
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া লার্নিং আর্নিং প্রকল্পের আওতায় আরও ২৬
হাজার জনকে ফ্রি ল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে,
সারাদেশের সব মানুষকে একটি নাম্বারে নাগরিক সেবা সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের
উদ্দেশ্যে ‘ন্যাশনাল কল সেন্টার’ তৈরি করা হচ্ছে। সে সঙ্গে কোরিয়া সরকারের
সহায়তায় আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারাদেশের সব
সরকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে এসে
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাবলিক ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে।
ঠিক একইভাবে একটি নাম্বারের মাধ্যমে নাগরিক সেবার নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এটি সম্পন্ন করতে পারলে নাগরিক সুবিধা পাওয়া আরও সহজ হবে। অনলাইনে সেবা
প্রদানের কলেবর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ডেটা সেন্টারের ক্রমবর্ধমান
চাহিদা পূরণের লক্ষে দেশের ৫ম বৃহত্তম টায়ার-৪ সার্টিফাইড ডেটা সেন্টার গড়ে
তোলা হবে এবং সেখানে ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তি সংযোজন করা হবে,
জি-ক্লাউড স্থাপন করা হবে। ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে ইউনিয়ন পর্যায়
পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি স্থাপন করা হবে। উদ্ভাবন ও উৎকর্ষতাকে
অনুপ্রেরণা প্রদান ও বাস্তবায়নের জন্য একাডেমি ফর ইনোভেশন, ডিজাইন এ্যান্ড
এক্সিলেন্স (আইডিএ) স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে, সরকার আইটি শিল্পের উন্নয়ন এবং
রফতানি বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার
প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি শক্তিশালী যৌথ টাক্সফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ
ব্যাংক, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এ্যান্ড সার্ভিসেস
(বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, শীর্ষ পাঁচটি আইটি প্রতিনিধির সমন্বয়ে
এ যৌথ টাক্সফোর্স গঠিত হবে। মঙ্গলবার তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের
সম্মেলন কক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইটি শিল্পের উন্নয়ন বিষয়ক এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
জানিয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। এ
লক্ষ্য পূরণে সংশ্লিষ্ট সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে
যৌথ টাক্সফোর্স গঠনসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যৌথ
টাক্সফোর্স স্থানীয় আইটি শিল্পকে বিদেশে তুলে ধরা, আইটি পণ্য বাজারজাত
করাসহ রফতানি বৃদ্ধিতে করণীয় ও উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। সভায়
দেশের আইটি সক্ষম সেবা (আইটিইএস) শিল্প প্রসারে ও দেশীয় সফটওয়্যার কেনার
বিষয়ে প্রকিউরমেন্ট রুলস সংশোধনীসহ রুলস এ্যান্ড রেগুলেশন নিয়ে আরেকটি
আলাদা কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্তও হয়েছে।