ভারতে গমের ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় তা ঠেকাতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন ভারতের বিজ্ঞানীরা।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএস এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবারের মতো গমে ব্লাস্ট রোগ দেওয়ায় রাজ্যের বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএইউ) বিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে রোগটির জন্য দায়ী জীবাণুকে ভালোভাবে বুঝতে চাইছেন।বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্ল্যান্ট প্যাথোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুনিতা মহাপাত্র বলেন, “বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা যেহেতু ২০১৬ সাল থেকে ব্লাস্টের বিষয়ে তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাই তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার মাধ্যমে আমরা একধাপ এগিয়ে যেতে পারব।
“তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের সহায়তা করবে। এমনকি এ ধরনের গবেষণা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যেসব দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা রয়েছে, তাদেরও সাহায্য করবে।”
ভারতের কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি গবেষকদের সঙ্গে এই কাজে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন সুনিতা।
গমের ব্লাস্ট রোগের পেছনে ম্যাগনাপোরথে অরিজায়ে নামে এক ধরনের ফাঙ্গাস দায়ী বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হলেও রোগটির সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও খুঁজে পাননি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা।
১৯৮৫ সালে গমে প্রথম এই রোগ দেখা দেয় ব্রাজিলে। এরপর দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনার কিছু অংশে রোগটি দেখা দিয়েছিল।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। গম উৎপাদনে এগিয়ে থাকা দেশের আট জেলায় ১৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমির ৯০ ভাগ গম গত বছর এই ব্লাস্ট রোগের প্রভাবে নষ্ট হয়।
গমে রোগটির লক্ষণ দেখা দেওয়ায় এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে গমের দানার বৃদ্ধি থেমে যেতে পারে বা বিকৃত হয়ে যায়; কোনো ক্ষেত্রে লক্ষণও বোঝা যায় না। ব্লাস্ট রোগের কারণে দানার পরিবর্তে শুধু থেকে যায় হলদে ভাব ধারণ করা খোসা।
খাদ্য উৎপাদন হ্রাসে বর্তমান বিশ্বের হুমকি এই রোগের প্রভাবে বাংলাদেশে গম উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পর ইতোমধ্যে গমের বীজ, লক্ষণবিহীন চারা ও অন্য বাহকে দ্রুত ও সুবিধাজনকভাবে গমের ব্লাস্ট চিহ্নিত করতে আনবিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি বের করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো.তোফাজ্জল ইসলাম এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন।
তিনি আইএএনএসকে বলেন, “ভারতে গমের ব্লাস্ট রোগের উৎস ও জেনেটিক পরিচয় সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয়ে আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে ভারতীয় গবেষকদের স্বাগত জানাই।ফিল্ড প্যাথোজেনোমিকস বিশ্লেষণী পদ্ধতি এবং আমাদের উদ্ভাবিত আনবিক শনাক্তকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে ভারতীয় নমুনাগুলো বিশ্লেষণে তাদের সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।”
জিন বিশ্লেষণ ও বায়োইনফরমেটিকস অধ্যয়নের মাধ্যমে দক্ষিণ আমেরিকার ম্যাগনাপোরর্থে অরিজায়ের কোন প্রজাতি বাংলাদেশে গমের ব্লাস্টের জন্য দায়ী তা বের করতে যৌথভাবে কাজ করছেনঅধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম ও চার মহাদেশের ১৪টি ইনস্টিটিউটের ৩১ জন গবেষক।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের গবেষকরা গমের ব্লাস্ট রোগেরজন্য দায়ী জীবাণুর খসড়া জেনেটিক ডেটা তৈরি করছেন।
তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, “কৃষকদের জন্য ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবনই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।”